ইসলামী ব্যাংকে চাকরি দেখিয়ে নিজ নামে সম্পদ গড়েছে মর্জিনা আক্তার ও তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন।

 ইসলামী ব্যাংকে চাকরি দেখিয়ে নিজ নামে সম্পদ গড়েছে মর্জিনা আক্তার ও তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন।


 ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার রাউতি গ্রামের বাসিন্দা মর্জিনা আক্তার। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। আর্থিক অনটনের কারণে মেয়েকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় দিয়েছিলেন তার দরিদ্র বাবা। কাজ করার সুযোগ পায় দেশের শীর্ষ বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম ওরফে এস আলমের বাসায়। এতেই যেন ভাগ্য খুলে যায় মর্জিনার। সুন্দর চেহারা ও চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে মর্জিনা। সেই সুবাদে সবসময় এস আলমের সাথেই থাকতেন। বিভিন্ন সময় দেশের বাইরেও গিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে বাঘবেড় গ্রামের আব্দুস সামাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু কিছুদিন পর সামাদের ছোটভাই সাদ্দামের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। অবশেষে সামাদকে তালাক দিয়ে সাদ্দামকে বিয়ে করেন মর্জিনা। এলাকায় ধুরন্ধর চালাক প্রকৃতির লোক হিসেবে পরিচিত সাদ্দামের সাথে বিবাহের পর দুজনের মাঝে দারুণ এক বোঝাপড়া চলে। ধীরে ধীরে দুজন মিলে এস আলমের বিভিন্ন সম্পদ নিজেদের নামে করতে থাকেন।

 ff f

 গত ৫ বছরের মধ্যে সাদ্দাম মর্জিনা দম্পতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। ধোবাউড়া উপজেলার বিভিন্ন দামি দামি জায়গা ক্রয় করেন সাদ্দাম।  অনুসরণ  ডাকবাংলোর সামনে প্রায় ১৫ কাটা জমি ক্রয় করেন। শিবানন্দখিলা গ্রামে ২০.৩২ একর জমি একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ক্রয় করেন। এছাড়া সরকারি দেড় একর জমি সে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। এমনকি সাধারণ জনগণের যাতায়াতের রাস্তাটিও দখল করে নিয়েছেন। সেই জমিতে বিশাল মাছের খামার করেছে সে। শিবানন্দখিলা গ্রামের রিয়াদ হাসান তালুকদার বলেন, সাদ্দামের তেমন কিছুই ছিল না, ৫ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আমাদের এখানে ২০ একরি জমির উপর বিশাল খামার করেছে। এমনকি সরকারি খাস জায়গা দখল করেছে। বিলে থেকে জমির ফসল বাড়িতে আনার জন্য সরকারি রাস্তাটাও দখল করেছে। প্রতিবাদ করলে তার গোন্ডা বাহিনী দিয়ে ভয় দেখাতো। স্থানীয় শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, সাদ্দাম এবং মর্জিনা ঢাকায় চাকরি করতো। হঠাৎ করে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সাদ্দাম এবং মর্জিনা দুজনই বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখায় চাকরি করেন। সেই সুবাদে মর্জিনার তার আপনদের পড়াশোনা না থাকলেও চাকরি দিয়েছে ইসলামি ব্যাংকে। এ ছাড়াও এলাকার বেশ কিছু লোকজনকে টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছেন। হত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মর্জিনা এলাকায় নির্মাণ করেছেন পাকা বাড়ি। একসময় জমিজমা না থাকলেও মর্জিনা তার গ্রামের বাড়ি রাউতি গ্রামে অন্তত দশ একর জমি কিনেছেন। স্থানীয় বাজারে একটি মার্কেট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। কাজের মেয়ে হলেও বাড়িতে আসতেন দামি মাইক্রোবাসে। স্থানীয় এনামুল হক বলেন, আশপাশের মানুষজন মর্জিনার বাড়িকে কোটিপতি বাড়ি নামে চিনে। এভাবে ধোবাউড়া অন্তত ১০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে সাদ্দাম মর্জিনা দম্পতির। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, সাদ্দাম কয়েক বছর আগে অন্যের সাইকেল বা মোটরসাইকেলে চড়ে ক্রিকেট খেলতে আসতো। কিন্তু সম্প্রতি সে চট্টগ্রাম থেকে একটি বিশেষ বিমানে করে ঢাকায় এসে পরে ভিআইপি গাড়ি দিয়ে খেলতে আসতো।

f ff 

 শিবানন্দখিলা মোড়ে তার মাছের খামারের দেড় একর সম্পত্তি ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার করেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, ২০ একর জমিতে মাছের খামার করেছে এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে নামজারি করেছে সে, আমি ইতোমধ্যে নামজারি বাতিল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর মর্জিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এছাড়া মর্জিনার নামে কয়েকটি ব্যাংকে ২২টি এফডিআর’এ থাকা এক কোটি টাকা জমা রাখার সন্ধান পাওয়া গেছে। 

ইসলামী ব্যাংকে চাকরি দেখিয়ে নিজ নামে এ সম্পদ গড়েছে মর্জিনা আক্তার ও তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। এতে দেখা যায়, চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রবর্তক মোড় শাখায় মর্জিনা আক্তারের নামে গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এক কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নগদ ও চেকের মাধ্যমে এসব অর্থ জমা হলেও কিছুদিনের মধ্যে সেই অর্থ উত্তোলন করা হয়। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মর্জিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে এখন জমা আছে মাত্র ৬০৫ টাকা। এ বিষয়ে জানতে সাদ্দামের মুঠোফোনে অনেকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর আর তাদের দেখা যাচ্ছে না। পলাতক রয়েছেন।

Post a Comment

0 Comments