আগস্ট মাসে দেশের মোট রেমিট্যান্সের পাঁচভাগের একভাগ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে।

 আগস্ট মাসে দেশের মোট রেমিট্যান্সের পাঁচভাগের একভাগ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে।


ইসলামী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আগস্ট মাসে দেশের মোট রেমিট্যান্সের পাঁচ ভাগের এক ভাগ এসেছে এই ব্যাংকের মাধ্যমে। আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রেও দশ ভাগের এক ভাগ হয়েছে এ ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এস আলমের সাত বছরের মহালুটপাটের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নির্দেশনার কারণে। রফতানি উন্নয়ন তহবিল ও ব্যাক টু ব্যাক এলসির ক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন আরোপ করায় বড় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন করতে পারছেন না, যা আমদানি-রফতানিতে বিঘ্ন ঘটানোর আশঙ্কা তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল করতে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ব্যবসায়ীরা ব্যাংকটির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।

fff

ব্যাংকারদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম একে একে ছয়টি ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এসব ব্যাংক থেকে ব্যাপক লুটপাট শুরু করেন। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা বের করেন। বর্তমানে তার দখলে থাকা আটটি ব্যাংক থেকে তিনি প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ নেন, যার বেশিরভাগই বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এস আলমের ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এস আলমের দখলে থাকা ব্যাংকগুলোর বোর্ড ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে। এছাড়া, এস আলমের পরিবারের সব সদস্য এবং তার কোম্পানিগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে এবং ব্যাংকগুলোর শেয়ার হস্তান্তরের ওপরও স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এস আলমের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে এবং প্রয়োজনে তার সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা আদায় করা হবে।


ব্যাংকাররা আরও জানান, এস আলম ইসলামী ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অর্থ লুট করার পর বাকি ব্যাংকগুলো বেহাল অবস্থায় পড়লেও ইসলামী ব্যাংক ব্যতিক্রম। এস আলম ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে নিলেও ব্যাংকটির নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন এবং গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর ফলস্বরূপ, গত মাসে দেশে মোট রেমিট্যান্সের পাঁচ ভাগের এক ভাগ এসেছে এই ব্যাংকের মাধ্যমে। এছাড়া আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও ব্যাংকটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

f ff

ইসলামী ব্যাংকের একজন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত গ্রাহক জানিয়েছেন, তিনি তার ব্যবসার শুরু থেকেই ইসলামী ব্যাংকের সাথে রয়েছেন এবং তার বার্ষিক লেনদেন ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। তিনি বলেন, এস আলমের চাপে গত সাত বছরে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তবে অনেক কষ্টের পরেও তিনি ইসলামী ব্যাংক ধরে রেখেছেন। ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকটি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় এস আলম থেকে মুক্ত হয়েছে। ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংকটি পুনরায় স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন এবং পুরনো গ্রাহকদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন।


তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায়। সাধারণত ব্যাক টু ব্যাক এলসির ক্ষেত্রে কোনো মার্জিনের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে যে ব্যাক টু ব্যাক এলসির ক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন দিতে হবে। এই সিদ্ধান্তের কারণে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যান্য ব্যাংকের মতো ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও যদি একই নিয়ম চালু করা হয়, তবে দ্রুতই ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও দ্রুত সম্প্রসারিত হবে। ইসলামী ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আশাবাদী যে, রেমিট্যান্সের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে দেশের এক-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স এই ব্যাংকের মাধ্যমে আসবে এবং আমদানি-রফতানির শীর্ষস্থানেও থাকবে। এজন্য তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

Post a Comment

0 Comments