সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসের জন্য একটি বড় আঘাত, তবে এর ফলে যুদ্ধের সমাপ্তি হবে না!
মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নিহত হওয়ার ঘটনা। ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, বুধবার দক্ষিণ গাজায় একটি অভিযানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে সাবেক শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পর সিনওয়ারের মৃত্যু গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সিনওয়ার হামাসকে একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীতে রূপান্তর করেছিলেন, যা ইসরাইলের ইতিহাসে অন্যতম বড় ঘটনার সূচনা করেছিল।
তবে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনওয়ার কোনো পরিকল্পিত অভিযানে নিহত হননি। বরং দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সংঘর্ষে তিনি প্রাণ হারান।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, যুদ্ধের পোশাক পরা সিনওয়ার ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন, যেখানে ট্যাঙ্কের গোলা আঘাত করেছিল।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার বাহিনীর এই সফলতার প্রশংসা করেছেন, তবে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, সিনওয়ারের মৃত্যু যত বড় বিজয়ই হোক না কেন, তা যুদ্ধের শেষ নয়।
নেতানিয়াহু বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের পরিণতি কী হয়। আজ আমরা সত্যকে মিথ্যার বিরুদ্ধে বিজয়ী করেছি। তবে নেতানিয়াহু তার সেনাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি এবং সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। তিনি তাদের ধৈর্য, সাহস, এবং ঐক্য বজায় রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
f ff
নেতানিয়াহু এবং গাজা যুদ্ধের সমর্থকরা সিনওয়ারের হত্যাকে একটি বড় বিজয় হিসেবে দেখছেন, কারণ তিনি হামাসকে রাজনৈতিক এবং সামরিকভাবে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং জিম্মিদের মুক্ত করার লক্ষ্য ছিল তার। তবে এই লক্ষ্যে ইসরাইল এখনো সফল হয়নি। গত এক বছরে গাজায় ইসরাইলের হামলায় ৪২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তবু হামাস এখনো শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে এবং ইসরাইলি সেনারা এখনও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
সিনওয়ারের মৃত্যু ইসরাইলের জন্য একটি বিজয় হতে পারে, তবে নেতানিয়াহু যতক্ষণ না অন্যান্য লক্ষ্য অর্জন করছেন, যুদ্ধের সমাপ্তি এখনও দূরে।
**কে এই সিনওয়ার?**
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ১৯৬২ সালে গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের মিশর-ইসরাইল যুদ্ধে তার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। তার পরিবার ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার সময় আসকালান শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে গাজায় বসতি স্থাপন করে।
ff f
২০০০ সালে এক ইসরাইলি এজেন্টকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সিনওয়ার জেলে যান এবং ২২ বছর জেলে কাটান। বন্দী অবস্থায় তিনি হিব্রু ভাষা শেখেন এবং ইসরাইলি বাহিনী সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন। ২০১১ সালে তিনি মুক্তি পান, তখন আরও এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীর সঙ্গে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি।
0 Comments