ইসলামী ব্যাংকে এস আলম: ৪ হাজার কোটি টাকার জামানত রেখে ৭৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ
নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৭৩ হাজার ১১৩ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, যা ব্যাংকের মোট ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ। তবে এর বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকে নিরীক্ষা কার্যক্রম চলছে, এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও তদন্ত করছে। এসব তথ্য বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এই বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণের ঘটনাটি দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, যা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থনে ঘটেছিল। ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদানকালে আইন ও নীতিমালার মারাত্মক লঙ্ঘন ঘটেছে।
ব্যাংকটির ঋণের অধিকাংশই এস আলম গ্রুপের একক প্রভাবাধীন ছিল, এবং এ ঋণ ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি ছিল। এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখল করার পর, তারা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন করে বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ তুলে নেয়। কিন্তু, এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত রাখা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়, কিন্তু তারপরও এসব ঋণ আদায় হচ্ছিল না।
বিভিন্ন নথিপত্রে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের সরাসরি ঋণের পরিমাণ ৫৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, যার বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ২ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। তাদের পরোক্ষ ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা, আর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ ৯ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা, যেখানে জামানত রয়েছে ৮৮৬ কোটি টাকা। এইভাবে, এস আলম গ্রুপ জামানতের মূল্য থেকে ১৬ গুণ বেশি ঋণ তুলে নিয়েছে। এসব ঋণের জন্য জামানত হিসেবে জমি, কারখানা, ব্যাংকের শেয়ার এবং নগদ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
f ff
এছাড়া, এস আলম গ্রুপের নামেই সবচেয়ে বড় ঋণ নেওয়া হয়েছে, যেমন এস আলম সুপার এডিবেল অয়েল কোম্পানি থেকে ১১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, যেখানে জামানত মাত্র ৬২ কোটি টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই চিত্র, যেখানে ঋণের বিপরীতে জামানত অত্যন্ত কম ছিল।
এস আলম গ্রুপের ঋণ সম্পর্কিত এসব তথ্য সম্প্রতি প্রকাশিত হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার তদারকি চলমান রয়েছে।
0 Comments