"ব্যাংকের ৮৭ শতাংশ ঋণ তুলেছেন একমাত্র গ্রাহক"

 "ব্যাংকের ৮৭ শতাংশ ঋণ তুলেছেন একমাত্র গ্রাহক"


বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের বিতরণ করা মোট ঋণের ৮৭ শতাংশ একমাত্র গ্রাহক নিয়েছেন। দুঃখজনকভাবে, এই ঋণের অর্থ এখন দেশে নেই, তা পাচার হয়ে বিদেশে চলে গেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর শেরাটন ঢাকায় ‘ড্রাইভিং চ্যালেঞ্জ: আনলকিং দ্য পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গভর্নর মনসুর। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।

গভর্নর বলেন, গত ১৫ বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে। এটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ঘটেছে, যা আমাদের সবার জন্য বেদনাদায়ক। ইসলামি ধারার কিছু ব্যাংকগুলোর ৮৭ শতাংশ ঋণ এক গ্রাহক নিয়েছে। দুঃখজনকভাবে, এই ঋণের অর্থ এখন দেশে নেই, বিদেশে চলে গেছে। এই অর্থ ফেরত আনা খুবই কঠিন। ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ঋণ ও পাচারের অর্থ-সম্পদ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।

গভর্নর আরও জানান, দেশের বেশ কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে ব্যাংক-টু-ব্যাংক তাদের সম্পদ পর্যালোচনা শুরু করবে।

আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর সব তথ্য-উপাত্ত যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারা অর্থ নিয়ে গেছে, তা বের হয়ে আসবে। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার রাজনৈতিক সহায়তা নেওয়া হবে।


f ff


মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে বলে জানান ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে, আর আগামী অর্থবছরে এটি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা যাবে।

মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য যে নীতিগুলি দরকার, সেগুলি প্রয়োগ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগামী জানুয়ারির মধ্যে মূল্যস্ফীতি উন্নতির লক্ষণ না দেখালে, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হবে।

গভর্নর আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ছাড়াই বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ হচ্ছে এবং এখন বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে এলসি খুলতে কোনো জটিলতা নেই। তিনি বলেন, গত চার মাসে প্রবাসীরা অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ মোশতাক হোসেন খান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, এশিয়ান টাইগারের চেয়ারম্যান ইফতি ইসলাম, দ্য টাইম ট্রাভেলিং ইকোনমিস্টের লেখক চার্লস রবার্টসন, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুর রহমান।

Post a Comment

0 Comments