শেখ হাসিনা একটি ধ্বংসস্তূপের মতো দেশ রেখে গেছেন, যেমন গাজা।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন গত আগস্টে বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তখন তাঁর চারপাশে ছিল বিষাদময় দৃশ্য। রাজপথে তখনো রক্তের দাগ ছিল, এবং মর্গে এক হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী ও শিশুদের মরদেহ রাখা হয়েছিল, যাদের শরীরে ছিল পুলিশের ছোড়া গুলির চিহ্ন।
১৫ বছরের এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। তিনি হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, আর সাধারণ মানুষ তাঁর নৃশংসতার প্রতিশোধ নিতে তাঁর বাসভবনে হামলা করেছে।
f ff
নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ইউনূস দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক বাসনা ত্যাগ করেছেন, কারণ হাসিনা তাঁকে অনেক সময় অপমান ও নির্যাতনের শিকার করেছেন। হাসিনা তাঁকে রাজনৈতিক হুমকি মনে করতেন এবং বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতেন না। তবে শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীরা তাঁকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে বললে, তিনি রাজি হন।
ইউনূস বাংলাদেশে ফিরে এসে গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "যে ক্ষতি হাসিনা করে গেছেন, তা বিশাল। এটি গাজার মতো, সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত একটি দেশ। তবে পার্থক্য হল, এখানে ভবন নয়, তিনি ধ্বংস করেছেন প্রতিষ্ঠান, নীতিমালা, মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।"
f ff
হাসিনার শাসনামল ছিল এক কর্তৃত্ববাদী শাসন, সহিংসতা এবং দুর্নীতির অভিযোগে ভরা। জুলাই ও আগস্টে কয়েক সপ্তাহের রক্তপাতের পর তাঁর শাসন পতিত হয়। প্রতিবাদ-বিক্ষোভে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। জাতিসংঘের মতে, এগুলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, যদিও হাসিনা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইউনূসের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকে দেশের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে হাসিনার শাসনের অধীনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করেছেন এবং গোপন আটক কেন্দ্রে নির্যাতনের অভিযোগ খতিয়ে দেখেছেন। মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং হাসিনার বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ তুলেছেন।
ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ২০২৬ সালের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এর পরে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তবে ঢাকার রাস্তায় হাঁটলে মনে হয় দেশটি এক গভীর গর্তে পতিত হয়েছে। ইউনূস এখনও প্রশংসিত হলেও, তাঁর শাসন পরিচালনার সক্ষমতা এবং প্রতিশ্রুত সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, ক্ষমতায় ফিরে আসতে মরিয়া। নির্বাচনের আয়োজনের জন্য ইউনূসের ওপর চাপ বাড়ছে, এবং তাঁর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
শেখ হাসিনার শাসনের পর দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবনতির দিকে গেছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে, এবং ঢাকার রাস্তায় অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেড়ে গেছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন দ্রুত হবে না, কারণ বর্তমান সরকারের সংস্কার করার মতো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতা নেই।
ff f
শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি ব্যাপক ছিল, যা দেশের ব্যাংকব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। হাসিনার আত্মীয়দের মধ্যে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে, এবং বর্তমান সময়ে বিদেশি আর্থিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্ত করছে।
অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে ইসলামি কট্টরপন্থীদের উত্থান নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি দলগুলো এখন স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং তাদের সমর্থন বাড়ছে।
আন্তর্জাতিকভাবে, অধ্যাপক ইউনূসের জন্য চাপ বেড়েছে, বিশেষত ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের কারণে। তিনি আশা করছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি করবে, তবে তাঁর শাসন ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
0 Comments