মার্কিন সংস্থা আইআরআইর জরিপ ৫৩ শতাংশ মানুষের পছন্দের দল জামায়াতে ইসলামী
যদি আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। জামায়াতকে ভোট দিতে চান ২৬ শতাংশ। এর পরই রয়েছে এনসিপি (৬ শতাংশ), জাতীয় পার্টি (৫ শতাংশ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (৪ শতাংশ)। ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এর জরিপ দেখাচ্ছে, ৬৯ শতাংশ মানুষের আস্থা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর। ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই জরিপ গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পরিচালনা করা হয়। আইআরআইয়ের পক্ষে ‘সেন্টার ফর ইনসাইটস ইন সার্ভে রিসার্চ’ দেশজুড়ে এ জরিপ পরিচালনা করে। সোমবার জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কাকে ভোট দেবেন সেই বিষয়ে তাঁরা এখনো নিশ্চিত নন। আর ১১ শতাংশ উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক বছর পার করার পর নতুন জরিপ করল আইআরআই। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবরের মধ্যে দেশের ৬৩টি জেলার (রাঙামাটি ছাড়া) ৪ হাজার ৯৮৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মতামত সংগ্রহ করেছে আইআরআই। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৪১০ জন। নারী ২ হাজার ৫৭৫ জন।
f ff
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে পছন্দে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। এ দলটির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্নে ৫৩ শতাংশ মানুষ পছন্দের কথা বলেছেন। বিএনপিকে নিয়ে প্রশ্নে দলটিকে পছন্দের কথা বলেছেন ৫১ শতাংশ মানুষ। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যক্রম পছন্দ করেছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতি নিজেদের পছন্দের কথা জানিয়েছেন ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পছন্দ করেছেন ২৫ শতাংশ মানুষ। যদি আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। জামায়াতকে ভোট দিতে চান ২৬ শতাংশ। এর পরই রয়েছে এনসিপি (৬ শতাংশ), জাতীয় পার্টি (৫ শতাংশ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (৪ শতাংশ)। জরিপে অংশ নেওয়া ৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কাকে ভোট দেবেন সেই বিষয়ে তাঁরা এখনো নিশ্চিত নন। আর ১১ শতাংশ উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রশ্ন রাখা হয়েছিলÑআসছে নির্বাচনে ভোট দেবেন কি না? ৬৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ভোট দেবেন। ২৩ শতাংশ বলেছেন, কিছুটা সম্ভাবনা আছে। অন্যদিকে ৭ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা কম। ২ শতাংশ ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মতামত দেননি আরও ২ শতাংশ মানুষ। যাঁরা ভোট দিতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৭১ শতাংশ। অন্যদিকে নারী ৬১ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ নাকি ‘মন্দ’ মনে করছেন ? ২৯ শতাংশ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। ‘মোটামুটি ভালো’ বলেছেন ৪৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৭২ শতাংশ মানুষ দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। অন্যদিকে ৭ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এ সময়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। ৪২ শতাংশ মনে করছেন, ভুল পথে এগোচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার কেমন করছেÑএই প্রশ্নের জবাবে ২৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। আর ‘মোটামুটি ভালো’ বলেছেন, ৪৪ শতাংশ মানুষ। সব মিলিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন ৭০ শতাংশ মানুষ। পুরুষদের মধ্যে ৭২ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে সন্তুষ্ট। নারীদের মধ্যে এ হার ৬৯ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘মোটামুটি খারাপ’ করছে। ১১ শতাংশের মতে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ‘খুবই খারাপ’। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘খুবই ভালো’ করছেন বলে মনে করেন ২৬ শতাংশ। আর ৪৩ শতাংশ মনে করছেন, তিনি ‘ মোটামুটি ভালো’ করছেন। সব মিলিয়ে ৬৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখেছেন। নারীদের তুলনায় বেশি সংখ্যক পুরুষ মনে করেন অধ্যাপক ইউনূস ভালো করছেন। পুরুষদের মধ্যে এ হার ৭০ শতাংশ। নারীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ। অন্যদিকে জরিপে অংশ নেওয়া ১৭ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘মোটামুটি খারাপ’ করছেন। ৯ শতাংশের কাছে প্রধান উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড ‘বেশ খারাপ’। অগ্রযাত্রার পথে এখনকার অর্থনৈতিক অবস্থাকে ভালো বলেছেন ২০ শতাংশ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ১৭ শতাংশ; আর ৮ শতাংশ মনে করছেন, খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার হয়েছে ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম গতি পেয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে বলে মনে করেন ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। অন্যদিকে জরিপে অংশ নেওয়া ২২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করছেন, দ্রব্যমূল্য এখনো বেশি। ১৮ শতাংশের মতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। গণতন্ত্রের অভাব বোধ করেন ৮ শতাংশ। আর ৬ শতাংশের মতে, কর্মসংস্থানের সুযোগ এখনো কম এবং দুর্নীতি বাড়ছে। তাঁদের মতে, এগুলো দেশের অগ্রযাত্রার পথকে বিচ্যুত করতে পারে। ২০২৩ সালের জরিপে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ভোটারদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ মনে করেন দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে প্রধান কারণ বলে মনে করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ। অপর দিকে ৪৪ শতাংশ মানুষ মনে করেছিলেন দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। এর প্রধান কারণ, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। একক প্রধান সমস্যা কোনটি বাংলাদেশের জন্য এককভাবে কোন সমস্যাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? জবাবে ২১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দুর্নীতি। অন্যদিকে ১৮ শতাংশের মতে, সেটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অপরাধ আর সন্ত্রাসবাদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মনে করেন ১২ শতাংশ। ৮ শতাংশের মতে, বেকারত্ব। নির্বাচনী ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দলে সংস্কারকে প্রধান সমস্যা বলেছেন ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ৬ শতাংশের মতে, প্রধান সমস্যা মাদক। বেশির ভাগই দেশ নিয়ে আশাবাদী জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি দেশ নিয়ে আশাবাদী। জবাবে ‘খুবই আশাবাদী’ বলেছেন ৪২ শতাংশ মানুষ। ‘মোটামুটি আশাবাদী’ বলেছেন ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে ১১ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের আশা ‘খুবই ক্ষীণ’। ‘একটুও আশাবাদী নন’ ৬ শতাংশ মানুষ।
0 Comments