৮ দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই : জামায়াত আমির

 ৮ দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই : জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা কেবল ৮ দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই এবং সেই বিজয় কেবল কোরআনের মাধ্যমেই সম্ভব। শুক্রবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আজ সকাল থেকেই বন্দর নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে ৮ দলের নেতাকর্মী ও নগরবাসী মিছিলে মিছিলে জড়ো হতে থাকেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম পরিণত হয় স্লোগানের নগরীতে। পরে দুপুর পৌনে ২টা থেকে সমাবেশের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তারা বক্তব্য দেওয়ার সময় নেতাকর্মীরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান প্রথমে সদ্যবিদায়ি ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিগত সরকার জনগণের জন্য নয়, নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। বাংলাদেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য মাওলানাকে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সেসময় কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন নিহতরা ‘রং দিয়ে শুয়ে ছিল’। জামায়াত আমির বলেন, তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল, রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গাড়ি দিয়ে পালানোর সাহস বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার হারিয়ে ফেলেছিল। দেশের সবকিছু তারা ধ্বংস করেছিল। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ এখনো ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি এবং ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ঐক্যের প্রশংসা করে ডা. শফিকুর রহমান ঘোষণা দেন, আন্দোলনরত ৮ দলের পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, এই ঐক্যই তাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে।


f ff

 দাবি পূরণ না হলে প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ার করেন। সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা ৫ দফা দাবি নিয়ে স্লোগন দেন। দফাগুলো হলো আল্লাহর আইন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা : দেশে ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও আল্লাহর আইনের শাসন কায়েম করা এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটানো। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি এবং প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী গোষ্ঠীর উৎখাত। বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত সব হত্যা ও লুটপাটের বিচার নিশ্চিত করা। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে যথাসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রদান করা। দেশের ১৮ কোটি মানুষের অধিকার ও মালিকানা কায়েম করা এবং কেবল ‘বনেদিদের’ জন্য দেশ শাসন বন্ধ করা। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ গরিব, দুঃখী ও মেহনতি মানুষের রক্তে গড়া। তিনি নিশ্চিত করেন, বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। তিনি ঘোষণা করেন, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কবর রচনা করে আল্লাহর আইনের ব্যবস্থা রচনা করা হবে। তিনি বলেন, ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জেগে উঠেছে এবং সব চক্রান্ত ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনতার বিজয় হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ব্রিটিশ, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত শাসকরা বৈষম্য দূর করতে পারেনি। তিনি বলেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে বৈষম্য থাকবে না। কেউ দশ তলায় কেউ নিচতলায় থাকবে—সেটা আর হবে না। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটি এম আজহারুল ইসলাম উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে চট্টগ্রামকে ইসলামের ঘাঁটি বানাই। সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এডভোকেট এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজসিলের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভ‚ঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল করিম আববার, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মোতালেব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা জিয়াউল হোসাইন প্রমুখ

Post a Comment

0 Comments