মে মাসে তিন বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসলেও রিজার্ভের ক্ষয় থামেনি

 মে মাসে তিন বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসলেও রিজার্ভের ক্ষয় থামেনি

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমুন্নত রাখতে বিগত দুই বছর ধরে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি গ্রহণ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। এই মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রায় ২২৫ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষয় এখনো অব্যাহত রয়েছে।
বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ জুন পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ১৮.৬৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এক সপ্তাহ আগে, ২৯ মে তা ছিল ১৮.৭২ বিলিয়নের কিছু বেশি। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ৫ কোটি ডলারের বেশি। তবে বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করে পাওয়া রিজার্ভ দেশের নিট বা প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেয়া এসডিআরসহ স্বল্পমেয়াদি বেশকিছু দায় বাদ দেয়া হয়। গত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল যে ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায় এবং রিজার্ভেও নিম্নমুখিতা দেখা দেয়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, কিন্তু রিজার্ভে এর বিপরীত প্রভাব পড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২,১৩৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। 
kk k
রিজার্ভের ক্রমাগত পতনের কারণ হিসেবে অর্থনীতির নীতিনির্ধারকরা ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বাজারে ক্রমাগত ডলার ছাড়াকে দায়ী করছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তব্যে জানান, গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাইয়ের শেষে ছিল ৩৯.৬ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের মে মাসের শেষে কমে ২৪.২২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়তে হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশী বিনিয়োগ না আসা, রফতানির প্রবৃদ্ধি কম হওয়া এবং বিদেশীদের ঋণ প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমানোর কারণে রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি ছিল ৯২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৯২ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
k kk
রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং রফতানি বৃদ্ধির প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, বর্তমানে পেমেন্টগুলো হচ্ছে এবং রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রিজার্ভ থেকে কম ডলার ছাড়তে হবে এবং আশা করা হচ্ছে, রিজার্ভের ক্ষয় ধীরে ধীরে কমে যাবে।

Post a Comment

0 Comments