তিনটি ব্যাংকের মধ্যে দখল নিয়ে সংঘাত, বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিনটি ব্যাংকের মধ্যে দখল নিয়ে সংঘাত, বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।


দেশের বৃহত্তম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। সংঘাতের সময় ব্যাংকটির পুরনো কর্মীদের ওপর গুলি চালানো হয়, যাতে অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাটি গতকাল সকালে রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ঘটে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে বহিরাগতরা এই গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠেছে।


এছাড়া, বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে গতকাল বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যাংকটির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান এবং বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালকদের পদত্যাগ দাবি করেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা চাকরিচ্যুত দুই শতাধিক কর্মকর্তার পুনর্বহালের দাবি জানান।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গতকালও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যাংকটি মুক্ত করার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ডা. রেজাউল হকসহ কিছু উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডার অংশগ্রহণ করেন।


৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। ‘জোর করে’ মালিকানা পরিবর্তন হওয়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ চলছে। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে ব্যাংক থেকে বাদ পড়া উদ্যোক্তাদের ফিরে আসা নিয়ে অস্থিরতা চলছে ন্যাশনাল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংকেও অস্থিরতা ও অভিভাবকশূন্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সরকার পতনের পর থেকে পলাতক ছিলেন এবং গত শনিবার তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান, যা গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে।

ff f

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংক খাতের অবস্থা গুরুতর। ঋণের নামে অর্থ লোপাটের ফলে বেশিরভাগ ব্যাংকের ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছে। ব্যাংক খাতকে পুনরুদ্ধার করতে হলে দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে, অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। আতঙ্কিত গ্রাহকরা আমানতের টাকা তুলে নিতে শুরু করলে অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।


২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তন হয় এবং নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। পুরনো কর্মীরা অভিযোগ করেন যে, মালিকানা পরিবর্তনের পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই প্রায় ১০ হাজার নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা বেশিরভাগই অযোগ্য ও অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুরনো কর্মীরা ঘোষণা দেন, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই অবস্থায় নতুন কর্মীদের প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার পর সংঘর্ষ শুরু হয় এবং গুলি ছোড়া হয়, যা পাঁচজন কর্মচারীকে আহত করে।

 বিকালে ইসলামী ব্যাংকের পুরনো কর্মীদের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, এএমডি জেকিউএম হাবিবুল্লাহ, মো. আলতাফ হুসাইন, মো. আকিজ উদ্দিন, মো. মিফতাহ উদ্দিন, মো. সাব্বির, কাজী মো. রেজাউল করিম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আ ফ ম কামাল উদ্দিন, তাহের উদ্দিনসহ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শাখা ব্যবস্থাপকদের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

Post a Comment

0 Comments