"কুমিল্লায় গ্যাংস্টার নিয়ন্ত্রণ"

"কুমিল্লায় গ্যাংস্টার নিয়ন্ত্রণ"


 বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কেউ তাকে "রাজা" বলতেন, আবার কেউ বলতেন "কুমিল্লার অঘোষিত জমিদার"। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে, কুমিল্লার রাজনীতিতে তার নিয়ন্ত্রণ ছিল চূড়ান্ত। তার ইচ্ছার বাইরে শহরে কিছু ঘটবে, এমনটি বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করতেন না। জেলায় অনেক প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী থাকলেও, সদরে বাহারের কথাই ছিল শেষ। তার রোষানলে পড়ে অনেকে কুমিল্লা শহরে ঢুকতেও পারেননি।


বাহারের নিয়ন্ত্রণ ছিল জেলার টেন্ডারবাজি, দখল, চাঁদাবাজি, সিটি করপোরেশন, ইপিজেড, হাসপাতাল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অফিস আদালতে। স্থানীয় প্রশাসনও তার ইচ্ছার বাইরে যেতে সাহস পেত না। জনশ্রুতি আছে, কুমিল্লার কোনো মসজিদের ইমামও বাহার ঠিক করতেন। তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা যেমন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, এবং মৎস্যজীবী লীগকে জিম্মি করে রেখেছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কমিটির বড় পদে আসীন ছিলেন।

 

fff f

 

১৫ বছরের শাসনে, বাহার নামে বেনামে প্রায় ডজন খানেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সোনালী স্কয়ার, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, এবং বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি নিজেও এবং তার অনুসারীরাও সম্পদে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। বাহারের নিয়ন্ত্রণে ছিল কুমিল্লার প্রায় সব ধরনের ব্যবসা, জমি, পরিবহন, এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম।


বাহার ও তার সহযোগীদের দ্বারা দখল হওয়া সম্পদের মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয় হিন্দুদের জমি ছিল। এছাড়া, বাহার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার বাণিজ্যেও যুক্ত ছিলেন, যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার টেন্ডার সিন্ডিকেট কুমিল্লার সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জিম্মি করে রেখেছিল।


কুমিল্লার ফুটপাথ, ইজিবাইক, বাস-ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখল, এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রম থেকে বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা আদায় হতো, যা মূলত বাহার এবং তার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

Post a Comment

0 Comments