"নাটকীয় পরিস্থিতি: জামায়াতের আমীরের মূল্যায়ন"
"নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেনাপ্রধান, প্রেসিডেন্ট, ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পরবর্তী সময়ে, গেল কয়েকটি দিন জামায়াতের জন্য চরম নাটকীয় ছিল। দলটি এখনও কাগজে কলমে নিষিদ্ধ, তবে বাস্তবে দলটির নেতাকর্মীরা দীর্ঘ এক যুগ পর স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে এসেছেন। খুলে দেওয়া হয়েছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও।
এই নতুন পরিস্থিতি নিয়ে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন। মানবজমিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি রাজনীতি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। তার সাফ কথা, ‘আমরা অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি।’ তিনি বিশেষভাবে ছাত্রদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত নতুন কোনো দল তৈরি করবে না, এমন সম্ভাবনা নাকচ করেছেন তিনি। শুক্রবার সকালে তার ঢাকার বাসায় গিয়ে দলটির একজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে বৈঠকের ফাঁকে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ডা. শফিকুর রহমান দলটির অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের তুলনায় খোলামেলা কথা বলেন। বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি অতীতে ফিরে যান এবং বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আঘাতটি করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের ওপর, পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের নামে। এরপর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়। শত হামলা ও ফাঁসির পরও আমরা মাথানত করিনি। তারপর বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া, এবং আলেমদের ওপরও আক্রমণ আসে। ছাত্ররা আমাদের এ অবস্থা থেকে মুক্ত করেছে এবং তাদের সঙ্গে পুরো জাতি দাঁড়িয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো গণঅভ্যুত্থান নয়, এটি একটি গণবিপ্লব। ’৬৯ এবং ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল, কিন্তু এবারের গণবিপ্লবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছে।’ এ আন্দোলনে হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, তবে চূড়ান্ত হিসাব এখনো পাইনি। শেখ হাসিনা বলেছিলেন পালাবেন না, কিন্তু তিনি ঠিকই পালিয়েছেন, তবে দেশ ও জাতির অনেক ক্ষতি করার পর।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যাপারে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি রয়েছে। আমরা সরকারের ভালো কাজকে সমর্থন করবো, আর ভুলত্রুটি হলে সেটা নিয়েও কথা বলবো। জামায়াত তো এখনো নিষিদ্ধ দল, এমন মন্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার শেষ মুহূর্তে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ভাঙচুর ও হামলা প্রসঙ্গে জামায়াতের আমীর বলেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, তবে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো সমর্থন করি না। নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যেন তারা কোনো অন্যায় না করে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাধা দেয়।
ff f
জামায়াতের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সে সংস্কার হতে পারে। যুগের প্রয়োজনে পরিবর্তন হয় এবং আমরা যে সংস্কার করছি না, তা নয়। তবে জামায়াতের নতুন কোনো দল বা সংগঠন গড়ে তোলার সম্ভাবনা তিনি নাকচ করেন। জামায়াতের আমীর জানান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকার পোস্টার লিখেছিলেন এবং ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন, একসময় জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন, পরে ছাত্রশিবিরে যোগ দেন।"

0 Comments