শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে এত নারী কেন রাস্তায় নেমেছিল?

 শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে এত নারী কেন রাস্তায় নেমেছিল?

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটাতে হাজার হাজার মানুষ যখন রাস্তায় নামল, তখন একটি বিশেষ বিষয় নজর কেড়েছিল—আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ।

অনেক নারী পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়েছেন। সাধারণত, বাংলাদেশের আন্দোলনগুলিতে এত বেশি নারীর উপস্থিতি দেখা যায় না। তবে এবার, নারীদের এই অংশগ্রহণ অনেক বিশ্লেষকের মতে অভূতপূর্ব।

ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা এবং পেশাদার বডি বিল্ডার ফারজানা লিও এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে একজন। কাজীপাড়া ও শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় তিনি সরাসরি রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ও শ্লোগান দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি শ্লোগান দিচ্ছেন: "এই মুহূর্তে দরকার, সেনাবাহিনীর সরকার।"



ফারজানা লিও মনে করেন, এই আন্দোলনে নারীদের সমর্থন না থাকলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হতো না। তার মতে, নারীরা ব্যাপকভাবে যখন কোনো আন্দোলনে যোগ দেয়, তখন ক্ষমতাসীনদের পক্ষে তা দমন করা কঠিন হয়ে যায়।

ফারজানা লিও আগে কখনও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না, তবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন। এই ঘটনাই তাকে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য করে। তিনি বলেন, "আমি মনে করেছি যে রাস্তায় গিয়ে আন্দোলন করাটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের ছেলেদের রক্ষা করতে হবে।"

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের মনেও সাহস যোগায়। নারীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে অনেক পুরুষও আন্দোলনে যোগ দেয়।

নারীদের এই অংশগ্রহণের পেছনে আরেকটি কারণ রয়েছে—শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে দমন করার জন্য ছাত্রলীগের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে তা সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক বুলবুল সিদ্দিকী বলেন, "মেয়েরা মিছিল কিংবা বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিল, তাদের লক্ষ্য ছিল সহপাঠী ও ভাইদের রক্ষা করা। যদিও একটি ধারণা ছিল যে মেয়েরা সামনের সারিতে থাকলে পুলিশ আক্রমণ করবে না, কিন্তু এবার তা কার্যকর হয়নি। মেয়েরাও আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু তারা রাস্তা ছেড়ে যায়নি।"

শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নতুন বার্তা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে, দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছে এবং নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা জানাচ্ছে—গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, বৈষম্যহীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের আহ্বান জানাচ্ছে।

ff f

ঢাকার মিরপুরের একটি দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালওয়া সারা। তিনি বলেন, "আমি চাই আমাদের তরুণদের মতামতের গুরুত্ব দেবে সরকার। আমি একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাই।" 

আরেক শিক্ষার্থী তানজিনা আফরিন বলেন, "আমি চাই আমার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের যেন ভূমিকা থাকে। আমি যাকে ইচ্ছে ভোট দিতে পারব। এটাই আমার চাওয়া।"


Post a Comment

0 Comments