গণপূর্ত বিভাগে পীর-মুরিদের নেটওয়ার্ক

 গণপূর্ত বিভাগে পীর-মুরিদের নেটওয়ার্ক




২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দীতে চারটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কাগজে-কলমে গণপূর্ত অধিদপ্তর সেখানে সাতটি অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখিয়েছে এবং এ খাতে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ‘ভুয়া’ তিনটি অনুষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ভিভিআইপি প্রোগ্রামের নাম করে এই অর্থ লোপাটের মূল পরিকল্পনাকারী হলেন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার, যিনি এককভাবে গণপূর্ত অধিদপ্তর পরিচালনা করছেন। নিজেকে পীর হিসেবে পরিচয় দেওয়া এই প্রকৌশলী তার স্বীকৃত মুরিদদের সঙ্গে মিলে এই অর্থ লুটপাট করেছেন। ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তার মুরিদ এবং ঠিকাদার নুসরত হোসেন। অন্তত এক ডজন প্রকৌশলী এসব অপকর্মে সরাসরি অংশীদার।

মুরিদদের কাছে শামীম আখতার পরিচিত নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড়ের হাকিমাবাদ খানকা-ই-মোজাদ্দেদিয়ার ‘পীর সাহেব’ হিসেবে। দেশ-বিদেশে খানকার শাখায় তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তার ভক্তরা। তবে পীরগিরির আড়ালে ঢাকা পড়েছে শামীম আখতারের প্রকৃত পরিচয়। পীর-মুরিদের মাধ্যমে তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তর পরিচালনা করছেন এবং তার মুরিদরা নিয়ন্ত্রণ করছে সব ঠিকাদারি কাজ।


সম্প্রতি মোহাম্মদপুর থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শাহ কামালকে ৩ কোটি টাকাসহ আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সূত্র জানায়, তিনি কিংডম বিল্ডার্স নামের একটি অফিস থেকে আটক হন। কিংডম কনস্ট্রাকশন, কিংডম হাউজিং, এবং কিংডম বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান শাহ কামাল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুসরত হোসেন, দুজনেই শামীম আখতারের মুরিদ। গণপূর্তের সব কাজের ব্যবস্থাপনা ও কমিশন আদায় করেন নুসরত হোসেন।

ff f

গণপূর্তের অন্তত এক ডজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, প্রায় চার বছর ধরে নুসরত হোসেন গণপূর্তের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি প্রধান প্রকৌশলীর মুরিদ পরিচয়ে ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীদের জিম্মি করেছেন। কোনো কাজই ১০% কমিশন ছাড়া দেওয়া হয় না।


গণপূর্তের নথি অনুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় শতকোটি টাকার কাজ করছে নুসরতের কিংডম বিল্ডার্স। গত চার বছরে কোম্পানিটি অন্তত ২০০ কোটি টাকার কাজ করেছে। নুসরত তার কোম্পানির নামে কম কাজ করলেও, প্রধানত তিনি প্রধান প্রকৌশলীর ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করছেন এবং সব কাজ ঠিকাদারদের মধ্যে বণ্টন করে কমিশন আদায় করেন।


২০২০ সালে শামীম আখতার ছয়জনকে পাশ কাটিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান। মন্ত্রীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে মেধাতালিকায় ৭ নম্বরে থেকেও তিনি এ পদে আসীন হন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার আগে তিনি হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) মহাপরিচালক ছিলেন এবং সেখানেও মুরিদদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।

ff f

শামীম আখতারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মাণ করে উপহার দেওয়া। এছাড়া, গণপূর্তের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি, পুনঃবদলি ও পদায়ন নিয়ে নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।


এই অভিযোগের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার মাহফুজুল আলম জানিয়েছেন, তিনি কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নন এবং দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার বাছাই মাঠপর্যায়ে হয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের তাতে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Post a Comment

0 Comments