শহীদ আহনাফ পরীক্ষায় অংশ নিলেন ‘একগুচ্ছ ফুল’ হয়ে।

শহীদ আহনাফ পরীক্ষায় অংশ নিলেন ‘একগুচ্ছ ফুল’ হয়ে।

সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এটি বিএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার হলের ছবি, যেখানে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে একটি টেবিলে শুধু একগুচ্ছ ফুল রাখা রয়েছে, আর তাতে লেখা আছে ‘শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ’।

ছবিটি ‘বিএএফ শাহীন কলেজ ফ্যাক্টস’ নামে একটি গ্রুপ থেকে শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, শহীদ আহনাফ; স্বৈরাচার পতনের পর পুনরায় শুরু হলো একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। দেশের স্বার্থে তার এই আত্মত্যাগ বিএএফ শাহীন কলেজ ও বাংলাদেশ আজীবন মনে রাখবে।
23346819


১৭ বছর বয়সী শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে গত ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ নম্বরে গুলিতে নিহত হন। পরদিন, দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আজ (১৮ আগস্ট) থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলা হয়।

কিন্তু আন্দোলনের পর যখন বিএএফ শাহীন কলেজের সহপাঠীরা ক্লাসে ও পরীক্ষার টেবিলে ফিরল, আহনাফ আর ফিরল না। আহনাফের টেবিলটি আজ ফাঁকা। তার স্মরণে বন্ধুরা সেখানে ফুল রেখে দিয়েছে। আহনাফের শোকাহত বন্ধুরা তাকে ভুলতে পারেনি এবং কখনো ভুলবে না।

আহনাফ তার পরিবারের সদস্যদের বলত, বড় হয়ে এমন কিছু করবে, যা নিয়ে তারা গর্ব করতে পারবে। তবে তারা এভাবে গর্বিত হতে চায়নি। রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল আহনাফ, যার ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
M23346819MM


কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিল আহনাফ। আন্দোলনে অংশ নিয়ে একবার টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে আহত হয়ে বাসায় ফিরেছিল সে। আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে আহনাফ তার মা ও খালাকে বলত, ‘তোমাদের মতো ভীতু মা-খালাদের জন্য ছেলেমেয়েরা আন্দোলনে যেতে পারছে না। ১৯৭১ সালে তোমাদের মতো মা-খালারা থাকলে দেশ আর স্বাধীন হতো না।’

আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী ও খালা নাজিয়া আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, আন্দোলনে যেতে বাধা দিলেই আহনাফ বলত, সে সাঈদ-মুগ্ধ ভাইদের মতো সাহসী হতে চায়। তাদের মতো কিছু হলে তারা গর্ব করে বলতে পারবে, ‘আমরা আহনাফের মা-খালা’। শেষ পর্যন্ত আহনাফ ঠিক সেই সাহসিকতা দেখিয়েছে।

‘বিএএফ শাহীন কলেজ ফ্যাক্টস’ থেকে শেয়ার করা ছবিটি অনেকেই শেয়ার করেছেন। গণমাধ্যমকর্মী রাফসান গালিব ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘সবাই ফিরেছে ক্লাসে, পরীক্ষার টেবিলে। শুধু শহীদ আহনাফই ফিরতে পারেনি। এই দৃশ্য এতদিন আমরা ফিলিস্তিনে দেখেছি। স্কুলের সহপাঠীরা সবাই ফিরেছে, যে বন্ধু ফিরে আসেনি তার টেবিল ফাঁকা, সেখানে তার নাম লেখা কিংবা ফুল রাখা।
MM23346819M


হাসিনা রেজিমের কারণে এমন দৃশ্য বাংলাদেশেও দেখতে হলো। আমরা ভাবতে পারিনি, গাজায় একের পর এক গণহত্যা দেখে একদিন আমাদেরও এভাবে একটি গণহত্যা সইতে হবে। রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লবের পর সবাই ফিরে গেছে কলেজে, শুধু আহনাফ ছাড়া।

আহনাফের টেবিলটা আজ ফাঁকা। তার স্মরণে সহপাঠীরা সেখানে ফুল রেখেছে। তারা তাদের শহীদ বন্ধুকে, প্রিয় ভাইকে ভুলতে পারেনি, আর কখনো ভুলবে না। ফুল হয়েই আহনাফ আজ একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আহা, ক্লাসের বা পরীক্ষা হলের টেবিল-চেয়ার নিয়ে আমাদের কত টানাটানি ছিল। তখন এগুলোকে জড় বস্তুই মনে হতো না।

দেশ পুনর্গঠনের পর নির্বাচন: কূটনীতিকদের ড. ইউনূসদেশ পুনর্গঠনের পর নির্বাচন: কূটনীতিকদের ড. ইউনূস
সত্যি যদি টেবিলের প্রাণ থাকত, আহনাফের এই শূন্যতা, এই ফুলের তোড়ার ভার কীভাবে সইত! ভাই, তুই বাংলা মায়ের বুকে আদরে থাক, মমতায় থাক আমাদের অম্লান স্মৃতি হয়ে। বেঁচে থাক বিপ্লবী আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে।’
MM23346819M


জনপ্রিয় নাট্য পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ লিখেছেন, "It's touching to hear that Shahid Ahnaf's classmates have honored his bravery and sacrifice in this way. It shows the deep respect and remembrance they hold for him." ✊

Post a Comment

0 Comments