**আন্দোলনের সেই রাতগুলোতে অনেক কিছু ঘটেছে: জামায়াতের আমির**

**আন্দোলনের সেই রাতগুলোতে অনেক কিছু ঘটেছে: জামায়াতের আমির**


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, "এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তারা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, তা কেউ জানে না। আন্দোলনের সেই রাতগুলোতে অনেক কিছু ঘটেছিল, যা ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে আবারও ঘটেছিল। সেদিন হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের সঙ্গে যেভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছিল, আমরা তা জানি। সেই রাতের লাশগুলো কোথায় নেওয়া হয়েছে, কেউ জানে না, তবে আল্লাহ সব জানেন।"


এই মন্তব্য তিনি বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে করেন। 

জামায়াতের আমির আরও বলেন, "বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বজন হারানোর শোকগুলো আমরা একত্র করে শক্তিতে রূপান্তর করব এবং অঙ্গীকার করব যে আমরা শহীদদের মর্যাদা রক্ষা করব। আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করব না। জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল, এবং আমরা চাই সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব বসুক, যারা নিজেদের গদি নিজেদের বাপ-দাদার সম্পদ মনে করবে না এবং জনগণকে দাস হিসেবে দেখবে না, বরং নিজেদের জনগণের চৌকিদার মনে করবে। জনগণ যেন শান্তিতে ঘুমায় আর তারা রাত জেগে পাহারা দেয়।"


তিনি আরও বলেন, "আমাদের ইতিহাস বড়ই বিচিত্র। আমরা ইতিহাসের পালা বদলে বন্ধুকে শত্রু এবং শত্রুকে বন্ধু বানাই। এমন কাজ করে কোনো জাতি কখনও বিশ্বের দরবারে বা নিজেদের বিবেকের কাছে সম্মানিত হতে পারে না। অপসংস্কৃতির এই যন্ত্রণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং জাতির জন্য যার যেখানে অবদান আছে, তা সম্মানের সঙ্গে স্বীকার করতে হবে।"


ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, "আমরা আজ শহীদ পরিবারের কাছে এসেছি সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নয়, বরং অনুপ্রেরণা নেওয়ার জন্য। তারা খুবই সৌভাগ্যবান। শহীদদের হাশরের দিন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তুমি তোমার জীবনের সর্বোচ্চ সম্পদ আমার জন্য দান করেছো। আজ আমি আমার জান্নাতের সব দুয়ার তোমার জন্য খুলে দিলাম। আমার আফসোস এবারের এই যুদ্ধে আমি শহীদের পরিবারের একজন হতে পারলাম না। এ সৌভাগ্য যাদেরকে আল্লাহ দান করেছেন, তাদের প্রতি আমার ঈর্ষা হয়। আমরা আজ ঘোষণা করতে এসেছি আমরা আপনার পরিবারের সদস্য হতে চাই।"

ff f

তিনি আরও বলেন, "এই আন্দোলন-সংগ্রামে জাতি, ধর্ম, ও দলের মধ্যে কোনো ব্যবধান ছিল না। এখানে অন্যান্য ধর্মের অনেক লোকও নির্মমভাবে মারা গেছেন। আমরা তাদের সবাইকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো এবং জাতি হিসেবে আমরা ঋণী। আমরা চাই এই ঋণ আদায় করতে এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে। আমি এই সরকার (শেখ হাসিনার সরকার) সম্পর্কে কিছুই বলব না। তাদের বিষয়টি আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দিলাম। রক্তের প্রতিটি ফোঁটা মিলিত হয়ে রক্তের প্লাবন সৃষ্টি করেছে, এমন কোনো জনপদ নেই বাংলাদেশে যা রক্তাক্ত হয়নি।"


ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "শহীদরা মহা সৌভাগ্যবান, তারা চলে গেছেন। মায়েরা তাদের ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন না, কারণ তারা জান্নাতের পথের অগ্রসৈনিক। বিভিন্ন হাসপাতালে এবং বাড়িতে আহত ভাই-বোনদের দেখতে গিয়েছি। হৃদয় ভেঙে গেছে যখন দেখেছি যুবক ছেলে দুই চোখে গুলি লেগে অন্ধ হয়ে গেছে। আহা! সে তো আর জীবনে আলো দেখবে না। তার জীবন থেকে আলো নিভে গেছে। যতদিন বেঁচে থাকবে, কারও সাহায্য ছাড়া একটি কদমও ফেলতে পারবে না। আমরা কীভাবে তাদের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেব? আমরা কীভাবে তাদের আপনজনদের সান্ত্বনা দেব?"


তিনি আরও বলেন, "নারায়ণগঞ্জে আমাদের শহীদ বোন সুমাইয়া ছিলেন। তার আড়াই মাসের নিষ্পাপ শিশুর দিকে তাকিয়ে আমরা নিজেদের ধরে রাখতে পারিনি। ও কাকে মা বলে ডাকবে? একটি শিশুর সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক তার মায়ের সঙ্গে। সেই মায়ের রক্ত খেয়ে সে বড় হয়েছে। যখন সে দেখবে অন্য বাচ্চারা মা-মা বলে ডাকছে, তখন সে কাউকে মা বলে ডাকার জন্য খুঁজে পাবে না। আমরা কীভাবে তাদের সান্ত্বনা দেব? যারা ক্ষমতার জন্য এত বেপরোয়া হয়ে গেল, তারা কি একবারও ভাবল না যে এরাও মানুষ, এরাও এই দেশের নাগরিক? কত শিশু এতিম হয়ে গেল, কত যুবতী মেয়ে বিধবা হয়ে গেল, কত বাবার বুক ভেঙে গেল। একবারও কি তারা এসব ভেবে দেখেছে?"


জামায়াতের আমির বলেন, "আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা বলেছি যে পরিবারগুলোর আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন তাদের জন্য অর্থ সহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। রাষ্ট্রের সকল খাতের সঙ্গে এটিকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে। আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমরা আপনার পাশে আছি। তারা কথা দিয়েছেন যে তারা এটি করবেন।"


তিনি আরও বলেন, "আমরা চেষ্টা করছি সারা দেশে যারা এরকমভাবে নিহত হয়েছেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে। আমাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা হিমশিম খাচ্ছে, অনেক জায়গায় গিয়ে তারা মায়েদের বুকফাটা কান্না সহ্য করতে পারছে না। তারা বলে, 'বাবা, আমার ছেলেটা কোথায় আছে, একটু বলতে পারবে?' এই মায়েদের কাছে এই জাতি কী জবাব দেবে?" 


ff f

Post a Comment

0 Comments