ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো সবারই জানা, তাই এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো সবারই জানা, তাই এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

দেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নানা অনিয়মের কারণে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। বিশেষ করে মন্দ ঋণ এবং অর্থ পাচারের মতো অপরাধগুলো ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তারা উপর থেকে আসা নির্দেশনা মেনে চলার প্রয়াসে এসব অনিয়মের সুযোগ দিয়েছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে লাভবানও হয়েছেন। ফলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো আমাদের সবারই জানা। তবে সমস্যাগুলো আরও গভীরভাবে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য যাচাই করে একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে 'ব্যাংকিং খাতে দখলদারিত্ব উচ্ছেদ: দুর্দশা কাটবে কি?' শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এই বিষয়গুলো আলোচনা করেন। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মনির হায়দার।


অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এস আলম, হলমার্ক, বিসমিল্লাহসহ বিভিন্ন বড় ঋণগ্রহীতার কথা শুনে আসছি। সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রথমত, মন্দ ঋণ বা বড় ঋণগুলোর সিকিউরিটি দুর্বল থাকলে সেগুলো পুনর্গঠন করা, ব্যাংকের তারল্য বাড়ানো এবং দখলদারত্ব সমস্যার সমাধান। দ্বিতীয়ত, সরকার যে একশো বিলিয়ন ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করছে, তার সুদের হার কমানো এবং ফেরত দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো। তৃতীয়ত, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, অর্থ পাচার প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। এসব অনিয়মের মূল সমস্যা হলো মন্দ ঋণ, বেনামি ঋণ, সিকিউরিটি যাচাই না করে ঋণ প্রদান, এবং ঋণ ব্যবহার না করে অন্য কাজে ব্যয় করা। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল, এবং অনেক ক্ষেত্রে ঋণ অনুমোদনের জন্য ফরমায়েশি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

ff f

মামুন রশিদ আরও বলেন, অনেক ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিচালকরা আলোচনার সুযোগ পাননি। জনতা ব্যাংক এবং সোনালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অনেক সময় উপর থেকে নির্দেশনা মেনে চলতে হয়েছে, যা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সুশাসন, নিরীক্ষা এবং কার্যকরতা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।


অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, দেশের পত্রপত্রিকাগুলো ব্যাংকিং খাতের অসংগতি এবং অনিয়মের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে, সমস্যার প্রকৃত গভীরতা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনীয় করণীয় নির্ধারণ করা যাবে। ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে কারা জড়িত এবং কারা সুবিধা পেয়েছে, তা খুঁজে বের করা জরুরি। মন্দ ঋণের পরিমাণ প্রায় চার ট্রিলিয়ন টাকা, যা একটি উদ্বেগজনক বিষয়। ব্যাংকের আমানতকারী হিসেবে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


আলোচনায় আরও অংশ নেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অ্যাডজ্যাংক্ট প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান, এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

 

Post a Comment

0 Comments