রাজনীতির লড়াই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়
সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনীতি নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই এটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। আগে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মীরা অনলাইনে বেশ সক্রিয় থাকলেও, ৫ই আগস্টের পর চিত্র বদলেছে। যদিও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এখনও সরাসরি সক্রিয় নয়, তবে তাদের কর্মীরা ফেসবুক এবং এক্সের (সাবেক টুইটার) মাধ্যমে নানা ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন গুজবও ছড়ানো হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরাও এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। ফলে এক জমজমাট অনলাইন যুদ্ধ চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক লড়াই এবং জনমত গঠনে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা আগামী দিনে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। যারা এই মাধ্যমকে অবহেলা করবে, তারা পিছিয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই অনেক বড় আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে, যেমন ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চ, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন এবং ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের আন্দোলন।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব বাড়ছে। "মি টু" আন্দোলন থেকে শুরু করে ফিলিপাইনের সাবেক স্বৈরশাসকের ছেলের ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত অনেক কিছুই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশেও শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপের ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি আওয়ামী লীগও সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকার জন্য বিশাল সাইবার বাহিনী নিয়োগ করেছে এবং সিআরআই-এর মতো গবেষণা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারে সজাগ। সম্প্রতি সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এক অনুষ্ঠানে জানান, ফ্যাসিবাদী শক্তি রাজপথে পরাজিত হয়ে এখন অনলাইনে সক্রিয় হয়েছে। ফেসবুকে নানা গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, এবং জনগণকে এ ধরনের তথ্য থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনলাইন প্রচারণায় সিআরআই এর ভূমিকা এবং তাদের প্রভাবশালী প্রচেষ্টা নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাও মন্তব্য করেছেন।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে অনলাইনে প্রোফাইলের রঙ পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল সবচেয়ে আলোচিত। লাল রঙ বিপ্লবের প্রতীক হয়ে উঠেছিল, যেখানে অধিকাংশ মানুষ বিপ্লবের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থনের ঘাটতি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অনলাইন ক্যাম্পেইনগুলোও আন্দোলনের পক্ষে বিশাল জনমত গঠন করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক প্রচারণা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বজুড়েই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সঠিক তথ্য এবং প্রচারণার মাধ্যমে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। তবে অনলাইন প্রচারণার পাশাপাশি মাঠের রাজনীতি এবং বাস্তব আন্দোলনও গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে যে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়, তা অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মেলে না। এজন্য বিশ্লেষকরা সোশ্যাল মিডিয়াকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
f ff
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এবং এর মাধ্যমে রাজনৈতিক মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশসহ বিশ্বের রাজনীতিতে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
0 Comments