বহুমুখী তদবিরের চাপে প্রশাসন অতিষ্ঠ।
সম্প্রতি, জেলা প্রশাসন এক দুর্নীতিগ্রস্ত তহশিলদারকে পৌর ভূমি অফিস থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করে। তার বদলি ঠেকানোর জন্য সাবেক মন্ত্রী এবং একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা তীব্র তদবির করতে শুরু করেন। এছাড়া, স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকও জেলা প্রশাসককে নানা চাপ এবং হুমকি দিতে থাকেন। তবে, বদলি আটকা না পড়লেও ডিসি নানা ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। সরকারের মাঠ প্রশাসন থেকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন পর্যন্ত বদলি, পদায়ন ও ঠিকাদারি কাজের জন্য তদবির চলছে। কর্মকর্তাদের মতে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে তদবির ছিল একমুখী, কিন্তু বর্তমানে সরকারের সমর্থক গোষ্ঠী, সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কাছ থেকে বহুমুখী তদবির আসছে। তদবিরের চাপে প্রশাসনের কর্মকর্তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের শাসনামলে, শীর্ষ কর্মকর্তাদের পছন্দ না হলে পদোন্নতি বা পদায়ন পাওয়া যেত না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনকে দলীয় এবং তদবিরমুক্ত করার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবে অনেক কমিয়ে ফেলেছে। এখন বহুমুখী তদবিরের চাপে সরকার পরিচালনার ক্ষতি হচ্ছে, যা অতীতের তুলনায় আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
রাজনীতিকরা এখন তদবিরের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। কর্মকর্তারা বলছেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসন শুধু আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং নেতারা তদবির করে প্রশাসনে পদোন্নতি ও বদলি সুবিধা গ্রহণ করছেন। এর ফলে প্রশাসনের কাজকর্মে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে তদবিরের সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের, এবং নতুন সরকারের অধীনে তা একেবারে পরিবর্তন হয়নি। সাবেক সচিব এবং প্রশাসন বিশ্লেষক একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, "তদবির অযোগ্যতা এবং নীতিবিরুদ্ধ কাজ। তদবিরে লিপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য প্রশাসনকে সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে পরিচালিত করতে হবে।"
তদবিরের চাপে মাঠ প্রশাসন এবং স্থানীয় কর্মকর্তারা সমস্যায় পড়েছেন, বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের চাপের কারণে। তদবিরকারীরা নিজেদের সুবিধার জন্য তীব্র চাপ সৃষ্টি করছেন, যা প্রশাসনের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
ff f
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, "তদবির আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে, তবে সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে।" আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, "এই তদবিরের সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের এবং বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তা অব্যাহত রেখেছেন।"
সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা এই তদবিরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, দাবি করেছেন যে সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের দায়িত্বে বসিয়ে প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
0 Comments